ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় বিমানবন্দর প্রান্তের কাওলা অংশে নামফলক উন্মোচনের মাধ্যমে তিনি বহুল কাঙ্ক্ষিত এই উড়ালপথ উদ্বোধন করেন।ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে বসুন্ধরা গ্রুপের ৯৫ ভাগ সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। বসুন্ধরা সিমেন্টের চিফ মার্কেটিং অফিসার খন্দকার কিংশুক হোসেন সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ঢাকার প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে যে সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে তার ৯৫ ভাগ বসুন্ধরা গ্রুপ সরবরাহ করেছে। বসুন্ধরা গ্রুপ পুরো প্রকল্পের জন্য বিটুমিন সরবরাহ করেছে। ঢাকার সব সমস্যার মধ্যে যানজট সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক। রাজধানীতে অসহনীয় যানজটের কারণে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে এ সমস্যার অনেকাংশেই সমাধান হবে।কিংশুক বলেন, প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নির্মাণের প্রধান উপাদান হলো সিমেন্ট ও বিটুমিন। এই প্রকল্প নির্মাণে বসুন্ধরা গ্রুপ প্রায় ৯৫ ভাগ সিমেন্ট ও বিটুমিন সরবরাহ করেছে। এর আগে পদ্মা সেতুর জন্য বসুন্ধরা সিমেন্টের বড় অংশও সরবরাহ করেছিল।
বসুন্ধরা গ্রুপ এই প্রকল্পের জন্য প্রায় আট লাখ টন সিমেন্ট সরবরাহ করেছে।ঢাকা উড়ালপথের (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) দৈর্ঘ্য ১৯.৭৩ কিলোমিটার। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে কাওলা থেকে রেললাইন ধরে তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর হয়ে যাত্রাবাড়ীর কাছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে গিয়ে শেষ হবে এই উড়ালপথ। র্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬.৭৩ কিলোমিটার।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজ পরিচালনা করছে একটি বিদেশি কম্পানি।
তার পরও বসুন্ধরা সিমেন্ট কেন বেছে নিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বড় প্রকল্পে কাঁচামালের মান এবং কম্পানির সিমেন্ট সংগ্রহের সক্ষমতার দিকে নজর দেওয়া হয়। এগুলো ছাড়াও লজিস্টিক ক্ষমতা এবং বিপণন কৌশলগুলোর ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। বড় প্রকল্পগুলোতে সরবরাহের গুণমান এবং ধারাবাহিকভাবে সরবরাহ করার ক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ। পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো বড় মেগাপ্রকল্পের জন্য বিভিন্ন ধরনের সিমেন্টের প্রয়োজন হয়, যা সব কম্পানির সরবরাহ করার ক্ষমতা নেই।তিনি ব্যাখ্যা করেন, সিমেন্ট দুই ধরনের পোর্টল্যান্ড কম্পোজিট সিমেন্ট (পিসিসি) এবং অর্ডিনারি পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট (ওপিসি)। ওপিসিতে ৯৫ ভাগ ক্লিংকার এবং প্রায় এক দশমিক জিপসাম রয়েছে। পিসিসি সিমেন্টে তুলনামূলকভাবে কম ক্লিংকার থাকে। বসুন্ধরা গ্রুপ প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তার ওপর নির্ভর করে সিমেন্ট সরবরাহ করে। প্রকল্পের প্রকৌশলীরা সিমেন্টের প্রতিটি চালান পরীক্ষা করে দেখেন।
কিংশুক বলেন, ‘গুণমান ভালো হওয়ায় তারা আমাদের সিমেন্ট ব্যবহার করেছে। বসুন্ধরা গ্রুপের প্লান্টে সব ধরনের সিমেন্ট উৎপাদনের সুবিধা পাওয়া যায়। আমরা যেকোনো প্রকল্পের চাহিদা অনুযায়ী সিমেন্ট তৈরি করতে পারি।’
কিংশুক আরো বলেন, শুধু এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নয়, বাংলাদেশের বেশির ভাগ মেগাপ্রকল্পে বসুন্ধরা সিমেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। পদ্মা মূল সেতু, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প, মেট্রো রেল প্রকল্পে একচেটিয়াভাবে বসুন্ধরা সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পেও বসুন্ধরা সিমেন্ট ব্যবহার করছে পঞ্চম মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানি।
এই পুরো প্রকল্পের জন্য প্রায় পাঁচ লাখ টন সিমেন্ট সরবরাহ করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। এর আগে পদ্মা সেতু প্রকল্পের পুরো অ্যাপ্রোচ রোডটি ১০০ ভাগ বসুন্ধরার সিমেন্ট দিয়ে করা হয়েছিল। জাজিরা ও মাওয়া এই দুই প্রান্তে নদী ব্যবস্থাপনার জন্য আমাদের ১৪টি সিমেন্ট সাইলো রয়েছে। বসুন্ধরা সিমেন্ট দিয়েও করা হয়। পদ্মা রেলওয়ে লিংক প্রকল্প, যার মাধ্যমে পদ্মা সেতু থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখানেও বসুন্ধরা সিমেন্ট একচেটিয়াভাবে ব্যবহার করা হয়।
অন্যান্য প্রকল্পে বসুন্ধরা সিমেন্টের ব্যবহার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা মূল পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতু নদী ব্যবস্থাপনা, পদ্মা সেতু অ্যাপ্রোচ রোড, পদ্মা রেল প্রকল্প, ঢাকা মেট্রো রেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিভিন্ন মেগাপ্রকল্পের সঙ্গে জড়িত। মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা সেতু, রূপসা রেল সেতু, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র আমরা সফলভাবে সিমেন্ট সরবরাহ করছি। আমাদের মান ও সেবায় সন্তুষ্ট হয়েই আমাদের ব্র্যান্ড বেছে নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।’
Source: kalerkantho